উপজেলা কৃষি অফিসারের কার্যালয় ,পাথরঘাটা ,বরগুনা
কেঁচো কম্পোষ্ট তৈরির সহজ উপায়
কেঁচো কম্পোস্ট (ভার্মি কম্পোস্ট) আমরা বাড়িতেই তৈরি করতে পারি কিছু সাধারণ উপকরণ দিয়ে। এখনো কৃষিতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রাসায়নিক সার ব্যবহৃত হয়। তবে বর্তমানে আমাদের দেশে স্বল্প পরিসরে কেঁচো কম্পোষ্ট (ভার্মি কম্পোষ্ট) এর ব্যবহার শুরু হয়েছে। আমরা আজ কেঁচো কম্পোষ্ট তৈরির সহজ উপায় সম্পর্কে জানবো।
কেঁচো একটি অন্যতম উপকারী প্রাকৃতিক ক্ষুদ্র প্রাণী। কেঁচো কম্পোস্ট একটি জৈব সার। জমির উর্বরতা বাড়াতে এ সার ব্যবহার করা হয় । গোবর, লতাপাতা, গাছের পাতা, খড়, পচনশীল আবর্জনা ইত্যাদি খেয়ে কেঁচো মল ত্যাগ করে এবং এর সাথে কেঁচোর দেহ থেকে রাসায়নিক পদার্থ বের হয়ে কেঁচো কম্পোস্ট তৈরি হয়। বর্তমানে এ সার ফসল উৎপাদনে এবং জমির স্বাস্থ্য রক্ষায় ব্যাপক সাফল্য এনেছে। যে কোনো ব্যক্তি কেঁচো কম্পোস্ট উৎপাদন ও বিক্রি ব্যবসা শুরু করে বাড়তি আয়ের পথ প্রসার করতে পারেন।
প্রথমে স্যানিটারি রিং এর ধারণ ক্ষমতা অনুযায়ী পরিমাণমত কাঁচা গোবর সংরক্ষণ করতে হবে।
সংগৃহীত কাঁচা গোবর গাঁদা করে পলিথিন অথবা পলিথিনের বস্তা দিয়ে ছায়া যুক্ত স্থানে মাটির উপরে অথবা মাটিতে গর্ত করে ৬-৮ দিন ঢেকে রাথতে হবে।
এরপর কোদাল অথবা বেলচা দিয়ে উক্ত মাটিগুলো উলট-পালট করে দিতে হবে যাতে করে গোবরে ৪০-৫০% আদ্রতা থাকে।
যদি আদ্রতা না থাকে তাহলে গোবরের উপরে হালকা করে পানি ছিটিয়ে দিতে হবে। এভাবে ওলট-পালট করতে করতে যখন গোবর কালচে রং ধারন করবে এবং গোবরের কাঁচা গন্ধ বা ঝাঁঝালো গন্ধ বের হয়ে যাবে ঠিক তখন মনে করতে হবে স্যানিটারি রিং বা চারিতে ঢালার জন্য উপযোগী হয়েছে।
এবার পঁচানো গোবর স্যানিটারি রিং বা চারিতে ঢালতে হবে।
লক্ষ্য রাখতে হবে যেন স্যানিটারি রিং বা চারিতে কমপক্ষে দুই ইঞ্চি পরিমান খালি থাকে। তা না হলে রিং বা চারি হতে কেঁচোগুলো বের হতে পারে।
প্রতি ১৫০ কেজি গোবরে নির্দিষ্ট প্রজাতির প্রায় ২০০০ টি কেঁচো দিতে হবে। পরবর্তীতে স্যানিটারি রিং বা চারিকে মশারি বা নেট দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। কেননা কেঁচোর অন্যতম শত্রু যেমন-পিঁপড়া, মুরগি, উইপোকা, ইঁদুর ও তেলাপোকা ইত্যাদির হাত থেকে রক্ষা করার জন্য মশারি বা নেট জাঁল দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। কেঁচোর প্রধান শত্রু লাল পিঁপড়া। কেঁচোর ডিমগুলোকে লাল পিঁপড়া হাত থেকে রক্ষা করার জন্য পরিমাণ মতো মরিচের গুড়া, হলুদের গুড়া, ডিটারজেন্ট পাউডার এবং লবণ একত্রে মিশিয়ে স্যানিটারি রিং বা চারির চারপাশে বর্ডারের মত করে দিতে হবে। যাতে করে লাল পিঁপড়া কেঁচোর ডিমগুলোকে আক্রমণ করতে না পারে। এরপর বায়ু চলাচল করতে পারে এমন বস্তা বা চালা নির্বাচন করে উক্ত স্যানিটারি রিং বা চারির উপরে ঢেকে দিতে হবে। সেই সাথে স্যানিটারি রিং বা চারির উপরে দেওয়া বস্তা বা চালার উপরে একটু হালকা করে পানি ছিটিয়ে দিতে হবে। তবে লক্ষ্য রাখতে যেন পানির পরিমান খুব বেশী না হয় কারণ পানির পরিমাণ বেশি বা কম হলে উভয় অবস্থায় কেঁচো মারা যেতে পারে। স্যানিটারী রিং বা চারি অবস্থিত গোবরের উপরের অংশ কেঁচোর খাওয়া শেষ হয়ে গেলে পানি ছিটানো বন্ধ করে দিতে হবে। সঠিকভাবে যত্ন নিলে ৩০-৪০ দিনের মধ্যে কেঁচো সার প্রস্তুত হয়ে যাবে।
উপাদান শতকরা হার
নাইট্রোজেন ১.০
পটাশিয়াম ১.০
জৈব কার্বন ১৮.০
ফসফেট ১.০
পানি ১৫-২৫
কেঁচো কম্পোস্ট তৈরি করতে সময় কম লাগে। এছাড়া অন্যান্য কম্পোস্টের চেয়ে কেঁচো কম্পোস্টে প্রায় ৭-১০ ভাগ পুষ্টিমান বেশি থাকে যা মাটির স্বাস্থ্য ভাল রাখতে এবং ফসল উৎপাদনে সহায়ক ভুমিকা পালন করে। গবেষণায় দেখা গেছে একটি আদর্শ ভার্মি কম্পোস্ট ১.৫৭% নাইট্রোজেন, ২.৬০% পটাশ, ০.৬৬% ম্যাগনেশিয়াম, ১.২৬% ফসফরাস, ০.৭৪% সালফার, ০.০৬% বোরণ রয়েছে।
কেঁচো কম্পোস্ট মাটিকে সমৃদ্ধ করে ও মাটির পুষ্টিমান বৃদ্ধি করে।
কেঁচো কম্পোস্ট মাটিতে পুষ্টি উপাদান যুক্ত করে এবং বেলে মাটির পানি ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
মাটিতে উপকারী অনুজীবের কার্যক্রম বৃদ্ধি করে এবং সবজি ফসলে মালচিং এর কাজ করে।
কম্পোস্ট সার মাটির ভৌত রাসায়নিক ও জৈবিক গুণাগুণ বৃদ্ধি করে।
এ সার ব্যবহারে পানির অনুপ্রবেশ ও শিকড়ের বৃদ্ধি ঘটে এবং মাটিতে বায়ু চলাচল বাড়ে।
এ সার ব্যবহারে মাটির গঠন উন্নত হয় এবং উৎপাদিত ফসলের গুণগতমান ভালো হয়।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস